নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও চালু করতে পারেনি পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল

Passenger Voice    |    ০৫:১২ পিএম, ২০২৪-০৪-২১


নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও চালু করতে পারেনি পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল

জাহাজ বার্থিংয়ের সুযোগ বাড়াতে নিজস্ব অর্থায়নে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও নানা জটিলতায় টার্মিনালটির অপারেশন কার্যক্রম চালু হয়নি। গত ডিসেম্বরে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হলেও সাড়ে চার মাসে টার্মিনালটি চালু করতে পারেনি তারা। 

গত ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তিতে চার মাসের মধ্যে অপারেশন চালুর কথা থাকলেও তা নতুন করে বাড়ানো হয়েছে সময়।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক  বলেন, ‘টার্মিনাল চালুর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্র নিতে হয়। ওই প্রক্রিয়াগুলো এখনও শেষ হয়নি। তাই আরও দুই মাস সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি জুনের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ টার্মিনালটি চালু হবে।’

জাহাজ বার্থিংয়ের গতি আনতে বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলী মোহনা থেকে একটু দূরে ড্রাই ডক ও চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের মাঝামাঝি ৩২ একর জায়গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় নির্মিত টার্মিনালটি ২০১৭ সালের ১৩ জুন অনুমোদনের পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল বন্দর। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এক বছর সময় বাড়ানো হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলেও অপারেটর নিয়োগ না হওয়ায় অলস পড়ে ছিল কন্টেইনার টার্মিনালটি। 

অবশেষে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। একই সময়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালসহ বন্দরের চারটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি টার্মিনাল পরিচালনায় আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বর সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। ৬ ডিসেম্বর রেড সি গেটওয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটিকে ২২ বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি টার্মিনাল চালু করতে ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ২৫টি দপ্তরের ছাড়পত্র লাগে। এ ছাড়া কাস্টম হাউসের সার্ভার ও বন্দরের পণ্য ডেলিভারি সিস্টেমের সঙ্গেও অনলাইন সংযোগ স্থাপন করতে হয়। অর্থাৎ বন্দর ও কাস্টম হাউসের সিস্টেমের সঙ্গে টার্মিনাল অপারেশনের আন্তঃসংযোগ করতে হয়। এর মধ্যে রেড সি গেটওয়ে প্রাথমিক কিছু যন্ত্রপাতি আনলেও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নেওয়া এখনও বাকি রয়েছে। তাই ছাড়পত্রগুলো না পাওয়া পর্যন্ত টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হবে না। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম বলেন, রেড সি গেটওয়ে আরও তিন মাস সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তাদের তিন মাসের জায়গায় দুই মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। ৬ জুন পর্যন্ত তারা সময় পেয়েছে। আশা করছি, এ সময়ের মধ্যেই পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হয়ে যাবে।

নিজেদের অর্থে যন্ত্রপাতি কিনে টার্মিনালটি পরিচালনা করবে রেড সি গেটওয়ে। এজন্য তারা তিন ধরনের ফি দেবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এককালীন বড় একটি ফি দেওয়ার পাশাপাশি বার্ষিক ফি দেবে। এ ছাড়া প্রতিটি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাবদ ফি দেবে। রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল অপারেট করলেও ট্যারিফ, রিভার চার্জ, নিরাপত্তার বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষই দেখবে।

প্যা.ভ/ত